ধামরাইয়ে নির্বাচনী বিরোধের জেরে যুবক নিহত।
ঢাকার ধামরাইয়ে পরিত্যক্ত বাড়ি , মাদকের আস্তানায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছে মো শিহান মাহমুদ নামে এক তরুণ। তার সহযোগি আলমগীর মূমূর্ষুবস্থায় হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর প্রহর গুণছে। দুটি মাদকের গ্রুপের মধ্যে ব্যবসায়ীক দন্দের জের ধরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। আবার অনেকেই বিষয়টিকে নির্বাচনি সহিংস ঘটনা বলে মনে করছেন।
এলাকাবসীর দেয়া তথ্যমতে হতাহত এ দু’জন মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাদেরকে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে। এ ইস্যুতে যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজুর বাড়ীতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আব্দুল মজিদের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর,মারধর ও লুটপাট করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজু ও পরিবারের লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্তণে ঘটনাস্থলে এ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ধামরাই থানা ও কাওয়ালীপাড়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশিটহল জোরদার করা হয়েছে।
রোববার দিনগত রাতে এ হতাহতের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের আমছিমুর সেসিপ মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে আব্দুর সবুরের পরিত্যক্ত বাড়ীতে মাদকের আস্তানায়। এব্যাপারে সোমবার সকালে ধামরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ধামরাই থানায় পুলিশি সূত্র।
এলাকাবাসী জানান,সেসিপ মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে আব্দুস সবুরের ওই পরিত্যক্ত বাড়ীতে প্রতিনিয়ত বসে মাদকের আস্তানা ও সুন্দরী রমণীদের রমরমা দেহব্যবসার আসর। প্রতিদিনের মত রোববার রাত ৮টার দিকে ওই মাদকের আস্তানায় আসর বসে। হঠাৎ উচ্চশব্দে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে লোকালয়ে। গ্রামবাসী দৌড়ে ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন শিহান(২০) ও আলমগীর হোসেন নামে দুইজন হা-পা ভাঙা ও রক্তাক্ত জখমবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে এবং মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করে রাজধানীর অর্থোপেডিক(পঙ্গু) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীনবস্থায় সোমবার ভোর ৫টার দিকে শিহান মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ে।
খবর পেয়ে ধামরাই থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে লাশ উদ্ধার ও ছুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। ময়না তদন্তের জন্য রাজধানী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন ধামরাই থানার পুলিশ অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক। তিনি আরও বলেন,সরেজমিনে পরির্শন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি পূর্ব শত্রুতার জেরে ঘটতে পারে। তবে মাদকের কানেকশন আছে কিনা তাও গভীরভাবে
খতিয়ের দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি হত্যাকান্ডের মূল মোটিভ ২৪ঘন্টার মধ্যেই উদঘাটিত হবে।
এব্যাপারে এলাকাবাসী আরও জানান,সপ্তাহ খানেক আগে বাস্তা এলাকার শামীম নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী ওই মাদকের আস্তানায় ইয়াবা বিক্রি করতে আসে। এরপর শিহান ও আলমগীর মামীমের কাছ থেকে টাকা ছাড়াই জোর করে ইয়াবার চালান ও তার ব্যবহৃত মুঠোফোন রেখে দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ কারণেও ঘটতে পারে এ হতাহতের ঘটনা। জনমনে প্রশ্ন কে এই মাদক ব্যবসায়ী শামীম? পুরিশ তাকে হণ্যে হয়ে খুঁজছে।
নিহতের মামা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় ইমরান হোসেন নামে এক যুবক শিহান ও আলমগীর হোসেনকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে আমছিমুর সেসিপ মডেল হাই স্কুলের পাশে পরিত্যাক্ত আব্দুর ছফুরের বাড়িতে নিয়ে মধ্য যুগীয় কায়দায় পিটিয়ে আহত করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিহান ও আলমগীরকে উদ্ধার করে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করলে আজ সকালে শিহান মারা যায়।
তিনি বলেন, আলমগীর হোসেন গুরুতর আহত অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ঘটনাস্থলে বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা নয়াচর গ্রামের দরবেশ আলীর ছেলে শরীফের মোবাইল পাওয়া গেছে।
ম্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজু বলেন,আমি দু’বার যাদবপুর ইউনিয়নে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবো ।কাজেই নৌকার কর্মীরা পরাজয়ের ভয়ে মাদকের আস্তানায় হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে। এহত্যাকান্ডের ঘটনায় আমার ছেলে জাহিদ হাসান দীপুসহ আমাকে ও আমার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা দায়েরের পায়তারা করছে। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারলেই তারা খালি মাঠে গোল দিতে পারবে। তাইতো তারা আমার বাড়ীতে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। এমনকি আমার মেয়ের গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে আমার স্ত্রী এবং মেয়েসহ পরিবারের লোকজনকে মারধর করেছে। কয়েকদিন আগে ওই মাদক আস্তানায় শিহান ও আলমগীর বাস্তা এলাকার মাদক বিক্রেতা শামীমের কাছন থেকে মাদকের চালান ও তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে রাখে। এ নিয়েও তাদের মধ্যে চরম বিরোধের সৃষ্টি হয়। এনিয়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
নিহতের মা নুরজাহান বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে তার ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে বারবার মূর্ছা যান।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবদুল মজিদ বলেন, শিহান আমার পরিচিত। ওই এলাকায় অনেক দিন ধরেই হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছিলো। কালকে লেবু বিক্রি শেষে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত ৩-৪ জন শিহান ও আলমগীরকে ডেকে মো. ছফুর উদ্দিনের পরিত্যাক্ত বাড়িতে নিয়ে মারধর করেন।
নৌকার কর্মী মোঃ রিজুয়ান আহাম্মেদ রিজন বলেন,পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজুর ছেলে জাহিদস হাসান দীপু,রোবেল হোসেন ও সাভার এলাকার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মোঃ শিশির আহাম্মেদ সহ ২০-২৫জন সন্ত্রাসী মিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটায়। মৃত্যুর আগে শিহান আমাদেরকে এসব কথা বলে গেছে।
অধিকার /ডেস্ক
Discussion about this post