আনোয়ারা ( চট্টগ্রাম ) প্রতিনিধি –
১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আনোয়ারা থানা রাজাকার কমান্ডার ছিলেন, রায়পুর ইউনিয়ন গহিরা গ্রামের জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রকাশ জউল্লা রাজাকার। যার নেতৃত্বে আনোয়ারার জনপদে স্বাধীনতাকামী শতশত নিরীহ মানুষ ও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছে শতশত নারী। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ১৪/১৫ টি গণকবর। যেই জল্লাদের নাম শুনলে এখনো শিউরে ওঠে গায়ের পশম। তাছাড়া জউল্লা রাজাকারের বড়ভাই নুরুল আনোয়ার চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম লীগের (প্রতিক্রিয়াশীল) সাধারণ সম্পাদক। প্রায় দেড়যুগ পর গত ৪ জানুয়ারী ২০২৫ শনিবার জউল্লা রাজাকারের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও স্মরণ সভার আয়োজন করেছে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন। দোয়া মাহফিল ও স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির চৌধুরী আনছার, পাবলিক প্রসিকিউটর ( পিপি) এডভোকেট ফৌজুল আমিন চৌধুরী। এই তিন নেতা ছাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির অন্যন্য নেতারা অনুষ্ঠানটি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দোয়া মাহফিল ও শোকসভার বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজাকার সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, জালাল উদ্দীন আহমদ চৌধুরী আমৃত্যু বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং জেলা কমিটির সভাপতিও ছিলেন। অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপির একাধিক নেতারা আলোকিত প্রতিদিনের প্রতিবেদককে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জালাল উদ্দীন আহমদ চৌধুরী প্রকাশ জউল্লা ছিলেন, একাত্তরের তালিকাভুক্ত রাজাকার, তিনি ছিলেন একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির ব্যানারে এই রাজাকারের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও শোকসভা আমাদেরকে ব্যথিত করেছে, মর্মাহত করেছে। এ বিষয়ে ৭১- এ মুক্তিযুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার হাইলধর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম মাষ্টার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আনোয়ারা থানা রাজাকার কমান্ডার জালাল চৌধুরী প্রকাশ জউল্লা রাজাকারের স্মরণে বিএনপি শোক সভার আয়োজন করেছে ? তিনি বলেন, ছি ছি ছি লজ্জা লজ্জা। বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসু মাষ্টার কথিত শোকসভার প্রতি ঘৃণা জানিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষক সাংবাদিক জামাল উদ্দিন জানান, জালাল চৌধুরী প্রকাশ জউল্লা মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আনোয়ারার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গণহত্যা, গণধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও সহ নিকৃষ্টতর সব কাজ করেছে। আমি এই শোকসভার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। গবেষক জামাল উদ্দিন বলেন, রাজাকার কমান্ডার জউল্লার স্মরণ শোকসভার আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যারা কলঙ্কিত করেছে তারাও একদিন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। যেমনটি হয়েছে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পরিবার। আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়ন মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান, জালাল চৌধুরীর নামে কারা ব্যানার ঝুলাচ্ছে, কারা পোষ্টার লাগাচ্ছে, কারা শোকসভা করছে, এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। বিএনপির নেতা-কর্মীরা সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ ও লালন করে চলে। এসব বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি আবু সুফিয়ানের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বর্তমানে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটিতে সাবেক হওয়াতে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Discussion about this post