রুপন দত্ত –চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর এসব ডায়োগনস্টিক সেন্টার বন্ধে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা না থাকায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় অলিগলির সর্বত্র রোগ নির্ণয়ের নামে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টারই গড়ে উঠেছে সরকারি অনুমোদন ছাড়া। আর এসব সেন্টারে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। অনেক সময় ভুল রিপোর্টের কারণে ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন তারা। সরকারি কোনো তদারকি না থাকায় একশ্রেণির অসাধু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল রোগীদের প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
বিভিন্ন সময় এসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক গুলোতে অভিযান চালিয়ে কিছু জরিমানা করলেও বন্ধ হয়নি কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ৩০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নিবন্ধনহীন। আবার নিবন্ধন থাকলেও নবায়ন করা হয়নি অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার । নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যবসা করছে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো। আর এসব চলছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক অবকাঠামো ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই। অধিকাংশ সেন্টারে অদক্ষ নার্স ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে মনগড়া চিকিৎসাব্যবস্থা। এতে চরম ভোগান্তি, অর্থনৈতিকভাবে প্রতারিত ও স্বাস্থ্য-শঙ্কায় পড়েছে এই উপজেলার মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ডাক্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, ডাক্তারদেরও অনুমোদনবিহীন ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে যাওয়া ঠিক নয়। অবৈধ কিংবা মানহীন ক্লিনিকগুলোকে শুধু জরিমানা করে না ছেড়ে এগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে একটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রায় ২১টি ভিন্ন কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স বা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে এসব লাইসেন্স যেমন পেতে হয়, তেমনই নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে লাইসেন্সগুলো নবায়নও করতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স ছাড়াও আর যেসব লাইসেন্স নিতে হয় তার মধ্যে রয়েছে-ট্রেড, ফায়ার, ফার্মেসি পরিচালনা, পরিবেশ জেনারেটর, ব্লাড ব্যাংক, ক্যাফেটেরিয়া ও লন্ড্রি, কমার্শিয়াল, বিএসটিআই (বেকারি), ট্রেডমার্ক (বেকারি), গভীর নলকূপ, আণবিক শক্তি কমিশন, আরসিও, মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও নারকোটিকস লাইসেন্স এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি ইত্যাদি।
আনোয়ারায় প্রায় ৩০টির মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন নেই, রেজিস্ট্রেশন নেই, হালনাগাদ নেই। এ ছাড়াও বাকি সব প্রতিষ্ঠানের কোনোটার লাইসেন্স নেই, কোনোটার হালনাগাদ নেই আবার কোনোটার রেজিস্ট্রেশন নেই। অপরদিকে কয়েকটা প্রতিষ্ঠান আবেদন করলেও অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদনই করেনি বলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে।
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মামুনুর রশীদ জানান, অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে আমরা খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
Discussion about this post