নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ-ভারতের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ সরকারি চাকরিরত অবস্থায় বেতন ভাতা ও পরবর্তীতে অবসর ভাতা গ্রহণ এবং রাখাল চক্রবর্ত্তী নামের এ ব্যক্তির অঢেল অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
তার বিরুদ্ধে রয়েছে আত্বীয় স্বজনসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ। রাখাল চক্রবর্ত্তীর ভারতীয় নাগরিক এবং বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে দুটি জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাখাল চক্রবর্তী নামের এই ব্যক্তি বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে সরকারি চাকুরীরত অবস্থায় বেআইনি কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অনিয়মও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা ভারতে পাচার করে আর সেই অবৈধ পাচার করা টাকায় ভারতে গড়ে তোলে আলিশান বাড়ি, বহু জমি জমাসহ বহু সম্পদ। ভারতীয় সেই তথ্য গোপন করে বাংলাদেশের সরকারি চাকুরীজীবী হিসেবে কর্ম জীবন চালিয়ে যান পরবর্তীতে অবসর গ্রহণের পর এখনো চাকরির অবসর ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। রাখাল চক্রবর্তী বাঁশখালী উপজেলার ৫নং কালিপুর ইউনিয়নের কোকদন্ডী গ্রামের হিমাংশু বিমল চক্রবর্তীর পুত্র। অবসরপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তা ভারতীয় নাগরিক হলেও বাংলাদেশ বর্তমান ঠিকানা লোকনাথ ভবন তৃতীয় তলা কাজের দেউরি এক নাম্বার গলি এসএস খালেদ রোড চট্টগ্রাম। তদন্তে জানা যায় রাখাল চক্রবর্তী এবং তার স্ত্রী চম্পা চক্রবর্তী উভয়ে আয়কর অফিস চট্টগ্রামে স্টেনো টাইপিস্ট ও উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন সরকারি চাকুরী করেন পরবর্তীতে আয়কর পরিদর্শক ও সুপারভাইজার পদে পদোন্নতিতে পান।
রাখাল চক্রবর্তী এবং তার স্ত্রী চম্পা চক্রবর্তী সরকারি কর্মচারী হওয়ার পরও তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও প্রতারণা আশ্রয় নিয়ে ভারতে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। রাখাল চক্রবর্তী পিতা প্রয়াত হিমাংশু বিমল চক্রবর্তী বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামে প্রধান সহকারী পদে চাকরি করতেন মাতা মৃণালিনী চক্রবর্তী ছিলেন গৃহিণী এবং নিরক্ষর চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস এবং সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণের পর রাষ্ট্রীয় পেনশন ভোগী ছিলেন। রাখাল চক্রবর্তী ভারতে টাকা পাচার ও বাড়ি ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ভারতীয় সিন্ডিকেট ব্যাংকের হিসাব খুলে ১৯৯২ হতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ১৯৯১ সালে হার্ডওযার ব্যবসায়ী তার ছোট ভাই রঞ্জিত চক্রবর্তীকে ব্যবসা গুটিয়ে দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেন। এইদিকে রাখাল চক্রবর্ত্তীর সেই সব সম্পত্তি ছোট ভাই রঞ্জিত চক্রবর্ত্তী ভারতে নাগরিকত্ব নিয়ে দেখভাল করেন।
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের নাগরিক সহজ সরল মাতা মৃণালিনী দেবী চক্রবর্তীকে তার অজান্তে চিকিৎসা ও তীর্থ দর্শন এর নাম করে ভারতে নিয়ে গিয়ে হঠাৎ করে ভারতের নাগরিকত্ব বানিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভাটপাড়া পৌরসভার অধীনে পান পুর মৌজা পাঁচ কাঠা জমিসহ তিনতলা বিল্ডিং সাল ২১-৪-১৯৯৩ সনের ২ হাজার ৪১৫ নম্বর কবলা দলিল মূলে রাখাল চক্রবর্তী অর্থে খরিদ করে নাম সর্বস্ব মাতাকে মালিক বানিয়ে পরবর্তী সে সম্পদ তার হাতে নিতে পারে মত কৌশলে রাস্তা পরিষ্কার করে।
উক্ত কবলা দলিলের বিক্রিত জমি ও বিল্ডিং এর মালিক ছিলেন বনমালী ঘোষাল, থানা চুঁচুড়া জেলা হুগলী পশ্চিমবঙ্গ ভারত।
ছোট ভাই রঞ্জিত চক্রবর্ত্তীর সাথে মৌখিক চুক্তি করে বাড়িসহ জমি দেখাশুনার জন্য তার হাতে তুলে দেন। খরিদা বিল্ডিং এ ভাড়াটিয়া দিয়ে রাখাল চক্রবর্ত্তীর বিভিন্ন সময়ে গিয়ে ভাড়া আদায় করেন। রেজিস্ট্রি দলিল সৃজন করে বিল্ডিং খরিদ করার পর মাতা মৃণালিনী চক্রবর্ত্তী বাংলাদেশে ফেরত চলে আসেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন।
১৯৯৫ সালে ১৫ ডিসেম্বর পেনশন ভোগগ্রহন অবস্থায় হিমাংশু বিমল চক্রবর্ত্তী মৃত্যু বরণ করলে স্ত্রী মৃণালিনী চক্রবর্ত্তী অর্থাৎ রাখাল চক্রবর্ত্তীর মাতা স্বামীর পেনশন আইনগত ভোগের অধিকারী হওয়ায় উক্ত পেনশন যথারীতি মৃণালিনী চক্রবর্ত্তী ভোগ করেন।
২০০৬ সালে রাখাল চক্রবর্ত্তী আবারো পূর্ব পরিকল্পনার অংশ নিয়ে মাতা মৃণালিনী চক্রবর্ত্তীকে চিকিৎসা ও তীর্থ দর্শনের নাম করে ভারতে নিয়ে গিয়ে নিজেকে ভারতীয় নাগরিকত্ব ঘোষণা দিয়ে ১২/ ১২/২০০৬ তারিখে ৬৪১ নং দানপত্র মূলে মা’র নামে থাকা তিনতলা বিল্ডিং সহ ভূমি পুনরায় রাখাল চক্রবর্ত্তী নিজের নাম করে লিখে নেন। এতে মা ও ছেলে দুজনেই ভারতীয় খাস নাগরিক হয়ে যায় এবং দানপত্র করে নেওয়া বিল্ডিংসহ জমির খতিয়ান নিজের নামে সৃজন করে হোল্ডিং নং বানিয়ে খাজনা ট্যাক্স দেয়। রাখাল চক্রবর্ত্তীর আইডি কার্ড ,প্যান কার্ড, অন্যান্য খতিয়ান ট্যাক্স রশিদ, রেশন কার্ড সৃজিত সকল ডকুমেন্টস তদন্তে প্রমানিত হবে এবং মৃণালিনী চক্রবর্ত্তী দানপত্র সহ ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার রহস্য চোখের সামনে চলে আসবে।
ভারতের ছাত্র ভিসার অবস্থানকারী পরবর্তীতে রাখাল চক্রবর্তীর বড় ছেলে অরিন্দম চক্রবর্ত্তী উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার আগরপাড়া নিবাসী ভারতীয় মহিলার সাথে দিনক্ষণ ঠিক করে রাখাল চক্রবর্ত্তী এর নামীয় বিল্ডিং সহ ভূমিতে বাংলাদেশ হইতে পারিবারিক সদস্যগণকে ভারতে নিয়ে মহা ধুমধামের সাথে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে। তারপর উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রাম থানার বসনগর ১ নং রোডে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে ছেলে ও ছেলের বউকে উপহার দেয়। যা আনুমানিক মূল্য ভারতীয় রুপিতে ৫০ লক্ষ টাকা। পরবর্তীতে রাখাল চক্রবর্ত্তী তার নিকটে থাকা তিনতলা বিল্ডিংসহ জমি জমা ১২ বছর ধরে ভাড়াটিয়া দিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়ে নিজের নামে খতিয়ানা দিয়ে পরিশোধ করে সপ্তাহ দখল পাকাপোক্ত করে ৮/৮/ ২০১৮ সালের ০৫ ৩৭৫ নং রেজিস্ট্রি দানপত্র মূলে রাতারাতি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বড় ছেলে অরিন্দম চক্রবর্ত্তীলে দানপত্র করে। রাখাল চক্রবর্ত্তী বাংলাদেশে ফিরে বাংলাদেশে পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে বসবাস শুরু করেন। ভারতের সমস্ত তথ্য গোপন করে চট্টগ্রামে আয়কর আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেন। এভাবে প্রশাসন ও ইমিগ্রেশনকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভারত যায় এবং ভারতে গিয়ে ভারতীয় নাগরিক সেজে সেখানকার নাগরিকত্ব দেখিয়ে সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। রাখাল চক্রবর্ত্তী ভারতীয় নাগরিকত্ব গোপন করা আরেক ভারতীয় নাগরিক রাখাল চক্রবর্ত্তী ছোট ভাই রঞ্জিত চক্রবর্ত্তীকে জোরপূর্বক ওয়াারিশি সনদপত্রে তার নাম থাকা সত্ত্বেও আর্জিতে না দেখিয়ে সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালত থেকে অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইবুনাল মামলায় গত বছরের ৫ জানুয়ারি ১৬ একর জমির রায় ডিক্রী নেন। রাখাল চক্রবর্ত্তীর অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ও দুদক চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে রাখাল চক্রবর্ত্তী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে পুরোটা ভুয়া, আমি বাংলাদেশের নাগরিক, আমি সরকারি চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছি প্রায় ১৭ বছর, একজন সনদপ্রাপ্ত করআইনজীবী, আমার পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় আমার ভাইসহ স্থানীয় কিছু ব্যক্তি মিলে আমার বিরুদ্ধে এই সব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি ভারতে আসা যাওয়া করেন জানিয়ে বলেন, আমার নামে ভুয়া আইডি কার্ড কে বা কারা বানিয়েছে বলতে পারব না সেই সাথে ভারতে সম্পদ থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফিরোজ ইফতেখার বলেন, সরকারি চাকুরী করে বিদেশে নাগরিকত্ব নেয়া এটা সম্ভব না, যদি নিয়ে থাকে এটা অবৈধভাবে করেছেন।
উচিত হবে উনার বিদেশে নাগরিকত্ব নেয়ার পরদিন থেকে সরকারি যত সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে সেগুলো ফেরত দেয়া, সরকার চাইলে উনার বিয়ষটি প্রমানিত হলে বিদেশে থাকা উনার অবৈধ সম্পদগুলো দেশে ফিরে আনার ব্যবস্থা করতে পারবে। তিনি তথ্য গোপন করে যদি কর আইনজীবী সমিতির সদস্য হয়ে থাকেন সেটা প্রমানিত হলেও সমিতি উনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, কেউ তথ্য গোপন করে দুই দেশে ভোটার হয়ে থাকলে এ আইডিগুলো ব্যবহার করে কোন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
Discussion about this post