হাটহাজারীতে গড়ে উঠা অবৈধ করাতকলে সাবাড় হচ্ছে সরকারি বন!সবই ম্যানেজের খেল!
হাটহাজারি উপজেলার সরকার হাট বাজারের উত্তরে কালি বাড়ী গেইট নামক স্হান থেকে একশ ফুট উত্তরে বালুর টাল নামক স্হান থেকে একশ ফুট দক্ষিনে চট্রগ্রাম খাগড়াছড়ি রোডের পশ্চিম পাশে করাতকল মালিক মোঃ ওয়াহিদুল আলম বন বিভাগের যোগসাজশে প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে তুলেছেন অবৈধ করাতকল । মোঃ ওয়াহিদুল আলমসহ বেশ কয়েকজনের কক্সবাজার জেলার চকরিয়া এলাকায়ও অবৈধ করাত কল আছে বলে জানা গেছে সবি চলে ম্যানেজ করে ।বিভিন্ন বনায়ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ করাতকল।
গতকাল বৃহস্পতিবার ১৯ আগস্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে চট্রগ্রাম খাগড়াছড়ি রোডের পশ্চিম পাশে টিন শেড দিয়ে ঘেরা এলাকায় চালু রয়েছে অবৈধ করাত কলটি। এমন অনেক অবৈধ করাতকল আছে হাটহাজারীর বিভিন্ন স্থানে আর গাছ চোরদের সাথে আতত করে সাবার করছে সরকারি বনের মুল্যবান গাছ।
জানা গেছে, বনবিভাগের যোগসাজশে ও মোটা অংকের অগ্রিম টাকা লেনদেনের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে এই করাতকল। যদিও এখনো বন বিভাগ থেকে কোন অনুমোদন মিলেনি। কিন্তু তার আগেই ৪/৫ মাস আগে গড়ে তোলা হয়েছে এই অবৈধ করাতকল। কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি বনায়ন এলাকায় সড়কের পাশে টিন শেড দিয়ে ঘেরা এলাকায় সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে ও বনবিভাগের অনুমোদন ছাড়া গড়ে তোলা হয়েছে করাতকল। এছাড়াও আরো অনেক অবৈধ করাত কল আছে বিভিন্ন এলাকায় যা বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে চলে। এরমধ্য দিয়ে বন বিভাগের গাছ সহজে লোপাট করতে সুবিধা হবে গাছ চোর সিন্ডিকেট ও গাছ চোরদের। হাটহাজারী থানার সাবেক ইউএনও রুহুল আমিনের অব্যাহত অভিযানে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল গাছ চোর সিন্ডিকেট। একের পর এক চোরাই গাছ আটকের পর গাছ চুরিতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। কিন্তু তার বদলীর পর হালে পানি পেয়েছে। আবার মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে এই চক্রটি। খোদ বন বিভাগের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ অনেকের।
আরও জানা গেছে বন বিভাগের লোকদের যোগসাজশে ও মাসোয়ারার বিনিময়ে বন থেকে প্রতিনিয়ত উজার হচ্ছে সরকারি গাছ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে গাছ চোর সিন্ডিকেট বনের গভীরে করাত বসিয়ে ওখান থেকে গাছ সাইজ করে রাতের আঁধারে পাচার করছে কোটি কোটি টাকার গাছ।
সরেজমিন অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের অধীন হাটহাজারী ফরেস্ট রেঞ্জটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন এলাকা। এই রেঞ্জের অধীনে রয়েছে শোভনছড়ি বিট, মন্দাকিনি বিট, সর্তা বিট, নাজিরহাট ডিপো এবং হাটহাজারী বিট কাম স্টেশন। এসব বিট ও স্টেশনের আওতায় রয়েছে সরকারি বিপুল পরিমাণ বনাঞ্চল, ব্যক্তিমালিকানাধীন বনাঞ্চল, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডেসটিনি বনাঞ্চল এবং চলমান রয়েছে সরকারি মালিকানাধীন ন্যাড়া পাহাড়ে বনায়ন কর্মসূচি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বন বিভাগ উত্তরের লোভনীয় পোস্টিং এলাকা হিসেবে খ্যাত এই হাটহাজারী রেঞ্জে কর্মকর্তাররা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকারি বন রক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে রীতিমতো প্রকাশ্যে লুটপাট চলে স্থানীয় গাছ চোর সিন্ডিকেট মিলে। ইতিপূর্বে ইসমাইল হোসেন নামে এক বিট কর্মকর্তাকে প্রকাশ্য অনিয়মের করা স্বীকার করায় ও নানা অভিযোগে বদলী করা হয়। জানা গেছে নগদ অঙ্কের ঘুষ ছাড়াও শোভনছড়ি, মন্দাকিনি, হাটহাজারী বিট এবং সর্তা বিটের বিভিন্ন ন্যাড়া পাহাড় বনায়ন কর্মসূচি এবং বাগান পরিচর্যার জন্য বন অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা লুটপাট চলে বলে অভিযোগ আছে।।
কিন্তু তাতে বদলায় না সেই পুরোনো চিত্র। একই স্রোতে চলে সবাই। তাই কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না সরকারী গাছ নিধন ও পাচার। পাচারকারীদের বেশীরভাগই স্বীকার করে বন বিভাগের লোকজন এসবের সাথে জড়িত থাকে । তাদের অনুমতি ছাড়া গাছ আনা সম্ভব নয়। এদিকে মাঝে মধ্যে দুই একটা ছোট খাট অভিযান চলে ধরা পরে অল্প সংখ্যক কাঠ। অথচ সরকার মাসে গাছ লাগানো ও এদের পিছনে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করছে। আর নানা অনিয়মের কারনে সরকারের বনায়ন কর্মসূচি জলে যাচ্ছে। হাট হাজারী, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, চকরিয়াসহ বিভিন্ন বনায়ন এলাকায় গড়ে উঠা অবৈধ করাত কল গুলো শুধুমাত্র জরিমানা না করে স্থায়ী উচ্ছেদ করা না গেলে সরকারি বনায়নের গাছ অবশিষ্ট থাকবে না। অবৈধ করাত কল গুলোর কারনে রাতের আঁধারে উজার হচ্ছে সরকারি বন। হুমকির মখে পড়বে জীব বৈচিত্র্য ও আবহাওয়া। বন বিভাগ এ ব্যাপারে আরো বেশি সজাগ ও সচেতন হওয়া জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের হাটহাজারী বিট কর্মকর্তা ফজলে কাদের এর সাথে মোবাইলে কথা বলতে চাইলে ওনি এখন ব্যাস্ত আছেন বলে জানান। রবিবারে ফোন করে বিস্তারিত জানার জন্য অনুরোধ করেন।
বিষয়ে জানতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরীর মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। খদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে করাতকল মালিক মোঃ ওয়াহিদুল আলমের কাছে আজকে করাতকল উদ্বোধন করছেন কিনা জানতে চাইলে জানান আমি এই করাত কল ৪/৫ মাস আগে করেছি। আপনার তো কোন লাইসেন্স নেই? কিভাবে অনুমোদন ছাড়া সরকারি বনায়ন এলাকায় একটি অবৈধ করাত কল বসালেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান আমি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করব। কাগজপত্র রেডি করছি। অনুমোদনের আগেই করাতকল করেছেন কোন আইন না মেনে, অনুমোদন পাওয়ার পরই তো বসাতে পারেন করাত কল। এটা কতটুকু আইন সন্মত এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সবাই তো এমন ভাবেই করছে! সরকারি বনায়ন এলাকায় করাতকল বসানোর অনুমোদন বন বিভাগ আপনাকে দিবে এটা কিভাবে নিশ্চিত হলেন? তিনি উত্তরে জানালেন চেস্টা করে দেখব না দিলে দিবে জা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আমার কাজ আমি চালিয়ে যাব। তার মানে আপনি অনুমোদন ছাড়া করাত কল চালাবেন? এই প্রশ্নটি তিনি এড়িয়ে যান।
আমাদের কাছে তথ্য আছে আপনি বন বিভাগের সাথে অগ্রিম মোটা অংকের টাকা লেনদেন করেছেন অনুমোদন পাওয়ার জন্য। এই প্রশ্নে তিনি জানান এমন কিছুই হয়নি তবে ওনাদের সাথে যোগাযোগ আছে।মোঃ ওয়াহিদুল আলম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া এলাকায়ও করাত কল আছে বলে স্বীকার করে এবং সেগুলোর অনুমোদনের জন্য কাজ করছে বলে জানায়। পরিশেষে প্রতিবেদককে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন এবং স্থানীয় এক মেম্বারে সমযোতায় টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। ম্যানেজ করতে না পেরে নিউজ করলে কি হবে বলে দন্ডোক্তি দেখিয়ে চলে যান। প্রশাসন কি করবে?
Discussion about this post