শফিক উল্লাহ হাবিবি ইমন – মহেশখালী
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে যে কটি তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক তার মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ অন্যতম। কিন্তু এই সনদ পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাম অন্তর্ভুক্তিতে ইচ্ছুক কালারমার ছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। স্বাভাবিকভাবে যে সনদ দু-এক দিনের মধ্যে পাওয়ার কথা তা পেতে ক্ষেত্রবিশেষে মাস গড়িয়ে যাচ্ছে। পরিষদে অনিয়মিত উপস্থিত হওয়া, সেবা গ্রহীতাদের সাথে দূর্ব্যবহারসহ সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে জন্ম নিবন্ধন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এ পরিষদের সচিব নজরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে । নানান অযুহাতে জন্মসনদ প্রদানে তালবাহানার আশ্রয় নিয়ে পরিষদের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে চকরিয়া উপজেলার বদরখালীস্থ নিজের ঘরে বসেই গ্রহীতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ কারণে ইউনিয়নের হাজার হাজার জনগণ দুর্ভোগ পড়েছে।
জানা গেছে, জনগণের সুবিধার্থে পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ জন্ম নিবন্ধন ফ্রি করে দেওয়ায় সচিব নজরুলের অবৈধ বাণিজ্যে ভাটা পড়ে, তাই গত ৭/৮ মাস নামমাত্র অফিস উপস্থিতি দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে বদরখালিস্থ নিজের বাসা থেকে জন্ম নিবন্ধন দিচ্ছে নজরুল। প্রকার ভেদে জন্ম নিবন্ধনের ফি সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালারমার ছড়া ইউনিয়নের চট্টগ্রামস্থ এক চাকুরিজীবী জানান, গত বছরের জুন মাসে আমার জন্ম সনদে জন্ম তারিখ ভুল সংশোধনের জন্য ফাইল জমা করি পরিষদে, কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও সংশোধনের কোনো খাবর পাচ্ছিলাম না। সচিব নজরুলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নতুন করে জন্মসনদ করে দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে হিসেবে ৫ হাজার টাকা চান, আমি ৪ হাজার ৩শ টাকা দিবো বললে সে রাজি হয়ে মাত্র ১১ ঘন্টার মধ্যে আমাকে নতুন জন্মসনদ ডেলিভারি দেয়। এখন আমার ২টি অনলাইন জন্মসনদ রয়েছে।
ইউনিয়নের আঁধারঘোনা এলাকার পানচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, জন্মসনদ পেতে পরিষদে ঘুরতে ঘুরতে হয়রানি হলেও সনদ পাওয়ার কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় গত ২৮ মে আমি বদরখালীস্থ সচিবের বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে সনদ এনেছি। চলমান ভোটার হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় জন্ম সনদ ছাড়া ফাইল জমা করা যাচ্ছেনা বলে টাকা দিয়ে হলেও আমাকে সনদ নিতে হয়েছে। একই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, তৎকালীন মীর কাসেম চেয়ারম্যানের আমলে এ সচিব আমাদের কাছ থেকে ৪টি জন্মসনদ নিতে হাজার হাজার টাকা নিয়েছে। ১নং ওয়ার্ড উত্তর নলবিলা এলাকার বহু ভুক্তভোগীও একই অভিযোগ তুলেছেন। সচিব নজরুলকে পরিষদ থেকে অপসারণ করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান ভুক্তভোগীরা।
এদিকে বয়স ভেদে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে সরকার নির্ধারিত ফি ২৫ থেকে ৫০ টাকা, আর সনদে সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। এর বাইরে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে আর কোনো টাকা দিতে হয় না। জন্মসনদ নিয়ে সচিবের বাণিজ্যের লাগাম টানতে আর জনগণের সুবিধার্থে পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ তিন মাসের জন্য সম্পূর্ণ খরচ নিজে বহন করে জনগণের ফ্রি করে দিয়ে জন্মসনদ অনলাইনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান নিয়ে পরিষদের কর্মচারী রবি উল্লাহ সিকদার, মফিজ আলম ও নুরুল আকতারের তত্বাবধানে দিলে তাঁরা তিন মাসে ২২ হাজার জন্ম সনদ ডেলিভারি দিয়ে রেকর্ড করে। বিষয়টি নিয়ে পরিষদের সচিব নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলতে পরিষদ ভবনে গেলে তাকে পাওয়ায় যায়নি, পরে তার মুঠোফোনে একাধিক কল দিলেও ফোন রিচিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়াছিন শিমুল জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। খতিয়ে দেখে দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
Discussion about this post