চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারের যোগসাজশে এমন জালিয়াতি করা সম্ভব হয়েছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী পরিবারের।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ টাকা পরিশোধে ধরা পড়েছে নজিরবিহীন দূর্নীতি। ক্ষতিগ্রস্ত ভুমি মালিকের সাথে নামের মিলকে পুঁজি করে চট্টগ্রাম এলএ শাখা থেকে ক্ষতিপূরনের টাকা তুলে নিয়েছে অন্য একজন।
ক্ষতিগ্রস্ত ভুমি মালিক মোস্তাফা খাতুনের ওয়ারিশরা আলাদতে মামলা দায়ের করলে বিষয়টি ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত পেতে ১৩ এপ্রিল ভুমিমালিক মোস্তাফা খাতুনের ছেলে আবুল কালাম চৌধুরী চট্টগ্রামের আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় আনোয়ারা উপজেলার বেলচূড়া মৌজার ৮৮২/ ৩২ খতিয়ানের ৩৯৮ দাগের সামিল ৬৯৯ খতিয়ানভুক্ত ৪২৪ দাগের ১.৩৩ শতক জমির প্রকৃত মালিক মোস্তাফা খাতুন। ২০২১ সালে ২১ অক্টোবর ভূমি মালিকের ওয়ারিশরা ক্ষতিপূরণের টাকা সংগ্রহের জন্য সাত ধারার নোটিশ পান ভুমি অধিগ্রহন শাখা থেকে। ভূমি অধিগ্রহন শাখায় গিয়ে তারা দেখেন ৬৯৯ খতিয়ানের ৪২৪ দাগের তফসিলভুক্ত জমির ক্ষতিপুরন বাবত ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৩৬২ টাকা ৪৮ পয়সা তুলে নিয়েছেন ভিন্ন মোস্তাফা খাতুনের ওয়ারিশরা।
একই ভাবে এই ভুমি মালিকের ভিন্ন আরেকটি ৩.৬০ শতক ভুমির বিপরীতে ১৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ২০৭ টাকা ৪৫ তুলে নেয়া হয়েছে ভুমি অধিগ্রহন শাখা থেকে। বৈরাগ মৌজার আরএস ৮৩৪ নং খতিয়ানের আরএস ৭৮৯ দাগের সামিল ১৭৩৬ নং খতিয়ান, বিএস ১৯৬৭।
প্রকৃত ভুমি মালিক মোস্তাফা খাতুন ১৯৯৭ সালের ২১ মে মৃত্যুবরন করেছেন।মোস্তাফা খাতুনের পিতা মরহুম আমজদ আলী, মাতা – মরহুমা বাচন খাতুন। তার স্বামী রিজওয়ানুল হকও মৃত্যুবরন করেছেন।
তার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ পাবার কথা। প্রকৃত ভুমি মালিক মোস্তাফা খাতুন ১৯৯৭ সালে মৃতবরন করলেও ২০২০ সালে আনোয়ারা ভুমি অফিস একটি জাল হেবা দলিল সৃজন করে এমন জালিয়াতির ঘটনা ঘটান তারা।
মোস্তাফা খাতুনের ছেলে মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর চৌধুরী, আবুল কালাম চৌধুরী ছাড়কৃত ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত পেতে ভুমি অধিগ্রহন শাখায় অভিযোগ করেছেন।
এর আগে চলতি ১৩ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর চৌধুরী আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে মোস্তাফা খাতুনসহ ১৩ জনকে। মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন আনোয়ারা ভুমি অফিসে ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর, ১০ মার্চ জাল হেবা দলিল সৃজন করেন মোস্তাফা খাতুন ও তার সন্তানরা। প্রকৃত ভুমি মালিক মোস্তাফা খাতুন ১৯৯৭ সালে মারা গেলেও ২০২১ সালে এসে আরেক মোস্তাফা খাতুনের নামে ভুমিটি হেবা করেছেন মর্মে দলিল সৃজন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর বলেন, মোস্তাফা খাতুন ১৯৯৭ সালে মারা যান। ভুমি অধিগ্রহনের টাকার লোভে হেবা দলিল করেছেন প্রতিপক্ষ। ভিন্ন মোস্তাফা খাতুনকে মালিক দেখিয়ে দুইটি ভুমির মুল্য হিসেবে প্রায় ২১ লক্ষ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আনোয়ারা ভুমি অফিসের কর্মচারীদের যোগসাজশে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি( এলএ) মাসুদ কামাল জানান, ‘ নামের সাদৃশ্য থাকার কারনে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রকৃত মালিক টাকা ফেরত পাবেন৷ দুই মোস্তাফা খাতুনের স্বামীর নামই দেখা যাচ্ছে রিজওয়ানুল হক। দুই পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকা হবে। এরপর দলিল পর্যালোচনা করে বিস্তারিত বলা যাবে৷
Discussion about this post