১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়গাথা বীরত্বের ইতিহাস। এই দিনে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বিজয়। একপ্রহর পর জাতির এই শ্রেষ্ঠসন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামবে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। শ্রদ্ধা জানাবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও বিদেশি কূটনীতিকরা। গত ১ মাসে ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ।
বিজয় দিবসের শ্রদ্ধায় সিক্ত হতে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এরইমধ্যে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। রংতুলির আঁচড়ে নতুনত্ব পেয়েছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। এমন প্রস্তুতি দেখে মনে হয় শ্রদ্ধা গ্রহণে যেন মুখিয়ে আছেন জাতির শ্রেষ্ঠসন্তানরা।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) জাতীয় স্মৃতিসৌধ গিয়ে দেখা যায়, ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো প্রাঙ্গণ। এ যেন এক ফুলের রাজ্য। রংতুলির আঁচড়ে যেন লাল ইটের মাঝে উঁকি দিচ্ছে সাদা রঙের শুভ্রতা। ধুয়ে মুছে সৌধের বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ফুলের টব। লেকের পানিতে ভাসছে লাল শাপলা। পুরো সৌধ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। এখন শ্রদ্ধা জানানোর অপেক্ষা।
মাসব্যাপী শতাধিক পরিচ্ছন্নকর্মীর ভালোবাসামাখা প্রচেষ্টায় সৌধপ্রাঙ্গণ সেজেছে নতুন সাজে। বিজয়ের স্বাদ যেন তারা খুঁজে নেয় এই শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভের পরিচর্যা করে। আবেগে আপ্লুত হয়ে আপন মনে কাজ করেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা।
স্বাধীনতার পর থেকেই স্মৃতিসৌধে কাজ করছেন আলাউদ্দিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে স্মৃতিসৌধে কাজ করছি। এখানে কাজ করে যেমন সংসার চলে তেমনি মনের খোরাক হিসেবে তৃপ্তিও অনুভূত হয়। খুব ভালো লাগে, এখানে কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয়।
অপর কর্মী আবুল কালাম বলেন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকেই তিনি এখানে নিয়মিত কাজ করেন। এখানে প্রায় সব ধরনের কাজ তিনি করেন। বাগান সাজানো, ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে করেন বিভিন্ন কাজ। স্বাধীনতার পর থেকে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান, স্বাধীনতার জন্য যারা ঢেলে দিয়েছেন বুকের তাজা রক্ত তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কাজ করছি। এটা স্বাধীনতার মতোই আরেকটা পাওয়া মনে করি।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। রাত থেকেই আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ঢাকা জেলা পুলিশের পাশাপাশি পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি সকল ধরনের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বরত গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিদেশি কূটনীতিকরা। এজন্য ধোয়ামোছার কাজ, ফুল দিয়ে সাজানোর কাজসহ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মোট কথা শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুরোপুরি প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
Discussion about this post